খবরের বিস্তারিত...


শহীদ আল্লামা শায়েখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রহঃ) এর জীবনীঃ

উনি এমন একজন সুন্নিয়াতের বীর সৈনিক ছিলেন। যিনি লাখো কোটি সুন্নি মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়াছিলেন। আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রহঃ) সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল করতেন, সুন্নিয়াতের খেদমত করতেন। সুন্নিয়াতের পক্ষে যুক্তিযুক্ত প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করতেন। তার মতো সাহসী কথা বলার মতো আলেম সুন্নিদের মধ্যে খুবই কম ছিলো। আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রহঃ) মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে সত্য-মিথ্যা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জনসম্মুখে এজিদি ইসলাম ও হোসাইনি ইসলামের পরিচয় তুলে ধরতেন। এজন্যই এজিদের অনুসারীরা তাঁকে দেখতে পারত না। তিনি মাহফিলে একটা কথা বলতেন, ইসলাম দু’ভাগে বিভক্ত, একটা হোসাইনি ইসলাম আরেকটা এজিদি ইসলাম।

জন্মঃ
মাওলানা শায়েখ নুরুল ইসলাম ফারুকী ১৯৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর পঞ্চগড় জেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম মাওলানা জামসেদ আলীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবনঃ
আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী এর পরিবার সূত্র জানায়, গ্রামের স্কুলে প্রথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন।নীলফামারী জেলাধীন ডোমার থানার অন্তর্গত তিনিহাটি জামেউল উলুম সিনিয়র মাদরাসা থেকে ১৯৭৫ সালে দাখিল পরবর্তীতে আলিম পাস করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলীয়া মাদরাসা (বরিশাল) থেকে কামিল (হাদিস বিভাগ) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮১ সালে নীলফামরী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পার করে জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন।
কর্মজীবনঃ
তিনি প্রথমে পুরান ঢাকার রায়শাহবের বাজার জামে মুসজিদের খতিব হিসেবে যোগ দান করেন। তার কিছুদিন পর ঢাকা কেরানীগঞ্জের নুরনিয়া ছিসতিয়া আলীয়া মাদরাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।
এছাড়া ১৯৮৯ সালে প্রথম হজ্জে গমনের উদ্দেশে মক্কায় যান তিনি।সেই বছর তিনি জেদ্দা বিমানবন্দরে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পান। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফেরত আসেন। এই সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়ত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আলীয়া মাদরাসায় ১৫ বছর শিক্ষকতা, রেডিও, টেলিভিশনে ২৫ বছর ওয়াজ নসিয়তের অনুষ্ঠান করেন।
তার উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে কাফেলার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই অনুষ্ঠানটির জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বের ১০টির ও বেশি দেশে ভ্রমণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের সুন্দর ও সঠিক নিয়মে পবিত্র হজ্জ পালনে ২৫ বছর হজ্জ কার্যক্রম চালিয়েছেন।
মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী মক্কা মোয়াজ্জামায় আল্লামা সায়েদ মোহাম্মদ মালিকি আলাদি (রা.) রওজায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ছারছিনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রঃ)মাজারে খেদমত করেন। শেষ জীবনে খাজা হযরত শরফুদ্দিন চিশতির মাজারে খাদেম ও সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়ত্ব পালন করেন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ
তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তার বইগুলো সুফিবাদ ভিত্তিক। সর্বশেষে ‘মারেফুল হারামাইন’ বইটি লিখেছেন। বইগুলোতে ইসলামের আদি বা অবিক্রিত রূপগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন।
জনকল্যানমূলক কাজঃ
মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। পূর্ব রাজাবাজার জামে মসজিদের সেক্রেটারিও ছিলেন। এছাড়া তিনি মেঘনা ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
সংসারজীবনঃ
মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী সংসার জীবনে দুই বিয়ে করেন। তার দুই সংসারে চার ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। ছেলেরা হলেন- মাসুদুর ফারুকী, ফয়সাল ফারুকী, মোঃ ফুয়াদ ফারুকী ও আহমেদ রেজা ফারুকী।মেয়েরা হলেন- হুমায়রা তাবাচ্ছুম তুবা এবং লাবিবা লুবা।
এদের মধ্যে, মাসুদ এবং দুই মেয়ে প্রথম সংসারের। তারা (প্রথম স্ত্রী) রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় থাকেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে,দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তিন ছেলেকে নিয়ে ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজার মুন্সীবাড়ীর একটি চার তলা ভবনের দুই তলায় থাকতেন।
শাহদাতঃ
আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকীর ব্যক্তিগত সহকারী মারুফ হোসেনের বরাত দিয়ে ছোট ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আহমেদ রেজা ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ শে আগস্ট ২০১৪ ইং, রাত আটটার দিকে প্রথমে দুই ব্যক্তি এসে কলিংবেল বাজায়। ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে বলা হয়, তারা হজ্জে যাবে, এ জন্য হুজুরের কাছে এসেছে। দরজা খুলে তাদের বসার ঘরে বসানো হয়।তিনি বাইরে যাবেন জানিয়ে যা বলার দ্রুত বলতে বলেন। যুবকেরা জানায়, তাদের লোকজন হজ্জ্বে যাবে, তারা বাইরে আছে। তারা ফোন করে সাত-আট জনকে ডেকে আনে। একপর্যায়ে তারা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে মারুফের হাত-পা বেঁধে ফেলে। একপর্যায়ে তারা ফারুকীর সাহেবের হাত বেঁধে তাঁকে খাবার ঘরে নিয়ে যায়। তারা পাশের ঘরে তার দ্বিতীয় স্ত্রী, শাশুড়ি, গৃহকর্মীসহ অন্যদের হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে।ঘাতকরা তাকে শহীদ করে চলে যায়।
আহমেদ রেজা ফারুকী বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বড় ভাই ফয়সাল দরজা খোলা পেয়ে বাসায় ঢুকে প্রথমে বসার ঘরে থাকা মারুফের বাঁধন খুলে দেন।পরে খাবার ঘরে গিয়ে তাঁদের বাবাকে গলা কাটা ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।খুবই নৃশঃস্য ভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা।যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
আল্লাহ্‌ তার শাহাদাতকে কবুল করুন(আমিন)
ব্যক্তিত্বঃ
শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রহঃ) ছিলেন সৎ- সাহসী, ন্যায়পরায়ন,কর্তব্যপরায়ন, দায়িত্বশীল প্রভৃতি গুনের অধিকারি। তিনি ছিলেন নবী কারীম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রকৃত আশেক।তিনি ছিলেন দুষমনে রাসূলদের জন্য চরম শত্রু।তিনি ছিলেন সুন্নীয়তের উজ্জল নক্ষত্র।তিনি ছিলেন সুন্নীয়তের বলিষ্ট কন্ঠস্বর।তিনি ন্যায় এবং সত্য কথা বলতে কখনো ভয় পেতেন না।
প্রতি বছর বারই রবিউল আওয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুশে তার ছিল বিশেষ অবদান।
মিডিয়া জগতে যখন বাতেল ফের্কার মোনাফেক গুলো সাধারণ মুসলমানদের গোমরাহির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তখন তিনি ইসলামের সঠিক ইতিহাস এবং কোরান-হাদিসের সঠিক ব্যাখা তুলে ধরে মুসলমানদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তিনি সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে ইসলামের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস এবং নবী-রাসুল ও সাহাবী গনের মাজার এবং গুরুত্বপূর্ন জায়গার ইতিহাস কোরান- হাদিসের আলোকে তার কাফেলা অনুষ্টানের মাধ্যমে তুলে ধরতেন।
কাফেলা অনুষ্টানের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস জানতে পারছে।তিনি ছিলেন নির্ভীক এবং দুঃসাহসী।তিনি ছিলেন ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ।তিনি সব সময় আল্লাহর কাছে শাহদাতের মউত আশা করছে যা তার কাফেলা অনুষ্টানে এবং বিভিন্ন ওয়াজে সবাই শুনেছে। আল্লাহ কবুল করছে।আল্লাহ তাকে শাহদাতের মউত দান করেছে।
শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী(রহঃ) ছিলেন সুন্নীয়তের নয়নমনি।তিনি ছিলেন সত্যিকারের আশেকে রাসূল।
ইয়া রাসূল আল্লাহ,আপনি আপনার প্রেমিক কে কবুল করুন।
আল্লাহ আপনি নুরুল ইসলাম ফারুকী সাহেব কে জান্নাতের সর্বোচ্চ মকাম দান করুন(আমিন)।

(সংগৃহীত)

 

Comments

comments